ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জার্মানিতে কয়েক ডজন পশ্চিমা মিত্রদের এক বৈঠকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবহারের লক্ষ্যে ট্যাঙ্ক সরবরাহ করার জন্য সরাসরি আবেদন জানিয়েছেন । যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলো ইতোমধ্যে ইউক্রেনকে আরও বেশি অস্ত্র দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। খবর বিবিসির।
তবে দক্ষিণ জার্মানির র্যামস্টিন এয়ারবেসে ওই বৈঠকেজেলেনস্কি পশ্চিমা দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের বলেছেন, শত শত ধন্যবাদ মানে শত শত ট্যাঙ্ক নয়।
advertisement
কিন্তু ইউক্রেনকে ট্যাঙ্ক সরবরাহ করার প্রশ্নে বিশেষভাবে সমস্যায় পড়েছে জার্মানি। তাদের তৈরি লেপার্ড-২ ট্যাঙ্ক পাঠাতে এবং অন্যান্য যেসব দেশের সামরিক বাহিনীতে এই ট্যাঙ্ক রয়েছে সেগুলো ইউক্রেনের হাতে তুলে দেয়ার ব্যাপারে তাদের ওপর চাপ বাড়ছে।
advertisement 4
পোল্যান্ড বা ফিনল্যান্ডের মতো দেশ যাদের কাছে লেপার্ড-২ ট্যাঙ্ক রয়েছে সেগুলি ইউক্রেনের কাছে পাঠাতে হলে প্রস্তুতকারী দেশ হিসেবে জার্মানির অনুমোদন লাগবে।
ইউক্রেনে রুশ অভিযান প্রতিরোধে সহায়তা করার জন্য আরও সরঞ্জাম সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দেয়ার একদিন পর ৫০টিরও বেশি দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রীরা র্যামস্টিনে জড়ো হয়েছেন। বৈঠকে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন তাদের বলেছেন, এখন সময় এসেছে সামরিক সহায়তাকে আরও ‘গভীর’ করার।
ইউক্রেনে যুদ্ধের প্রায় ১১ মাস পর ন্যাটোর সামরিক অধিনায়করা বিশ্বাস করেন যে সেপ্টেম্বরের শেষ থেকে সৈন্য সংখ্যা বাড়িয়ে মস্কোর সরকার বসন্তকালে নতুন করে আক্রমণের পরিকল্পনা করছে।
পশ্চিমা দেশের কর্মকর্তারা মনে করছেন, রুশ বাহিনীকে হটিয়ে দেয়ার জন্য আগামী কয়েক সপ্তাহে একটি “সম্ভাব্য সুযোগ” তৈরি হয়েছে। তারা বলছেন, রসদের ঘাটতি পূরণ এবং অতিরিক্ত সৈন্যবল একত্রিত করার প্রচেষ্টা সত্ত্বেও রুশ বাহিনীতে গোলাবারুদ এবং প্রশিক্ষিত সৈন্যের সঙ্কট রয়েছে।
অন্যদিকে, রাশিয়া পশ্চিমা দেশগুলিকে সতর্ক করেছে এই বলে যে তার শত্রু দেশকে ট্যাঙ্ক সরবরাহ করা হলে এই সংঘাতকে তা “অত্যন্ত বিপজ্জনকভাবে” বাড়িয়ে দেবে।
ব্রিটেন ইতোমধ্যে ঘোষণা করেছে যে তারা ১৪টি চ্যালেঞ্জার-২ ট্যাঙ্ক ইউক্রেনে পাঠাবে। কিন্তু কিয়েভের সরকারের চাহিদা আরও বেশি। সে কারণে জার্মানির লেপার্ড-২ ট্যাঙ্ক এই যুদ্ধের সেই সমীকরণের চাবিকাঠি।
ব্রিটিশদের সরবরাহ করা ট্যাঙ্কের তুলনায় লেপার্ড-২ ট্যাঙ্কের সরবরাহ অনেক বেশি এবং ইউরোপে এক ডজনেরও বেশি দেশের সামরিক বাহিনীতে এই ট্যাংক ব্যবহার করা হয়। র্যামস্টিনে বৈঠকের আগে, ট্যাঙ্ক সরবরাহ করার বিষয়ে জার্মানির দ্বিধাগ্রস্ত মনোভাবের সমালোচনা করেছেন জেলেনস্কি।
তিনি বার্লিন সরকারকে আশ্বাস দিয়েছেন যে লেপার্ড-২ ট্যাঙ্ক হাতে পেলে সেগুলিকে শুধুমাত্র প্রতিরক্ষার কাজে ব্যবহার করা হবে এবং সেগুলো কোনভাবেই রাশিয়ার ভূখণ্ডের ভেতরে ঢুকবে না। এক জার্মান টিভিকে তিনি বলেন, আপনার লেপার্ড-২ ট্যাঙ্ক থাকে, তাহলে সেগুলো আমাদের দিয়ে দিন।
ওদিকে পোল্যান্ডের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী পাওয়েল ইয়াবলনস্কি শুক্রবার ইঙ্গিত দিয়েছেন যে এই প্রশ্নে বার্লিনের মতামত যাই হোক না কেন, তারাই ইউক্রেনকে লেপার্ড-২ ট্যাঙ্ক সরবরাহ করতে প্রস্তুত রয়েছেন।
পোলিশ রেডিওকে তিনি বলেন, আমরা বিষয়টা দেখছি। আমি মনে করি যদি বাধার মাত্রা বেশি হয়, তাহলে আমরাই এধরণের অসাধারণ পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত থাকবো।“
ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ইউরি স্যাক বিবিসিকে বলেছেন, ইউক্রেনের জন্য ট্যাঙ্ক পাঠানোর অর্থ স্বাধীনতার জন্য ট্যাঙ্ক পাঠানো।
যদি এই ট্যাংক ইউক্রেনকে পাঠানো না হয়, তাহলে এমন একদিন আসবে যেদিন রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে এগুলি নিজেদেরই ব্যবহার করতে হবে, বলে তিনি সতর্ক করেন।
জার্মান সরকার চলতি সপ্তাহে বলেছে, লেপার্ড-২ ট্যাঙ্কের বিষয়ে তাদের সিদ্ধান্ত নির্ভর করবে যুক্তরাষ্ট্র তাদের এব্রামস ট্যাঙ্ক ইউক্রেনে পাঠাতে সম্মত হয় কি না, তার ওপর। আমেরিকানরা এখনই এই ট্যাঙ্ক ইউক্রেনে পাঠাতে চায় না।
তবে নতুন জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী বরিস পিস্টোরিয়াস বলেছেন, এধরনের শর্ত সম্পর্কে তিনি অবগত নন। ফলে সব মিলিয়ে ট্যাঙ্ক সরবরাহ করার প্রশ্নে বার্লিন সরকারের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি এবং একলা চলো নীতি গ্রহণের একটা আশঙ্কা রয়েছে।
অতি সম্প্রতি, ইউক্রেনকে পেট্রিয়ট বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পাঠানোর এক অনুরোধ জার্মানি শুরুতে প্রত্যাখ্যান করেছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে পেট্রিয়ট পাঠানোর সাথে সাথে জার্মানির অবস্থানের পরিবর্তন ঘটে। এবং ট্যাঙ্ক সরবরাহ করার প্রশ্নেও জার্মানি যুক্তরাষ্ট্রকেই নেতৃত্বে দেখতে চায়।