রাশিয়া ছেড়ে বেলারুশে চলে যাবেন বেলারুশ প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কোর মধ্যস্থতায় বিদ্রোহ বাদ দিয়ে ভাগনারের সেনাদের ফিল্ড ক্যাম্পে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া ইয়েভগেনি প্রিগোজিন, বিনিময়ে তার বিরুদ্ধে করা ফৌজদারি মামলা তুলে নেওয়া হবে।
ঘটনাবহুল দিন শেষে শনিবার সন্ধ্যায় ভাগনারের সঙ্গে হওয়া সমঝোতার বিস্তারিত তুলে ধরতে গিয়ে ক্রেমলিন এ কথা জানায়।
শুক্রবার রাতে ভাগনার রাশিয়ার সামরিক নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ঘোষণা দেয়, পরে তারা রস্তোভ-অন-দনে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলার সদরদপ্তর দখলে নেয় এবং মস্কোর দিকে অগ্রসর হতে থাকে। রাজধানী থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে থাকা অবস্থায় বেলারুশের প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কোর মধ্যস্থতায় তারা বিদ্রোহে ক্ষান্ত দেয় এবং ক্যাম্পে ফিরে যায়।
“প্রিগোজিন বেলারুশে চলে যাবেন, তার মামলা তুলে নেওয়া হবে,” শনিবার সন্ধ্যায় ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ এমনটাই জানিয়েছেন।
ইউক্রেইন যুদ্ধে বীরত্ব বিবেচনায় বিদ্রোহে অংশ নেওয়া ভাগনার সদস্যদের বিচারের আওতায়ও আনা হবে না।
“ভ্লাদিমির পুতিনের সরকার এই যোদ্ধাদের অবদানকে যথেষ্ট শ্রদ্ধার চোখে দেখে,” বলেছেন পেসকভ।
আর ভাগনারের যেসব যোদ্ধা বিদ্রোহে অংশ নিতে রাজি হয়নি, এর মধ্যে বেশ কয়েকটি ইউনিটও আছে, তাদেরকে রুশ প্রতিরক্ষা বাহিনীতে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হবে, জানিয়েছেন ক্রেমলিনের মুখপাত্র।
ইউক্রেইন যুদ্ধে রাশিয়ার সবচেয়ে আগ্রাসী ইউনিটের স্বীকৃতি পেয়েছিল ভাড়াটে সেনাদের দল ভাগনার বাহিনী যাদের নেতৃত্বে তীব্র লড়াইয়ের পর গত মাসে রাশিয়া ইউক্রেইনের বাখমুত শহরের দখল পায়।
বাহিনীটির প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোজিন পুতিনের ঘনিষ্ঠজন হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। তবে ইউক্রেইন যুদ্ধের মধ্যে তার সঙ্গে রুশ সেনাবাহিনীর নেতৃত্বের বিরোধ প্রায়ই বিশ্ব গণমাধ্যমের নজর কাড়ছিল।
শুক্রবার হঠাৎ করেই তিনি অভিযোগ করেন, রাশিয়ার সামরিক নেতৃত্ব ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে তার বাহিনীর বহু সেনাকে হত্যা করেছে, তাই তিনি তাদের নিজ নিজ পদ থেকে অপসারণ করে শাস্তি দিতে চান।
এ অভিযোগ জানানোর কয়েক ঘণ্টা পর শনিবার ভোররাতে প্রিগোজিন জানান, তার ভাগনার বাহিনীর যোদ্ধারা ইউক্রেইন থেকে সীমান্ত অতিক্রম করে রাশিয়ার রস্তোভ অঞ্চলে প্রবেশ করেছে এবং তারা মস্কোর সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে যেতে প্রস্তুত। তার বাহিনীর ২৫ হাজার যোদ্ধা তার সঙ্গে আছে বলেও দাবি করেন তিনি।
গতকাল শনিবার দিনভর ভাগনার বাহিনী রস্তোভ থেকে ১,১০০ কিলোমিটার দূরে মস্কোর পথে অগ্রসর হয়।
তাদের থামাতে রাশিয়ার সেনাবাহিনী আকাশ থেকে গোলাবর্ষণ করেছে বলে জানিয়েছিল প্রায় সবকটি আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম। কিন্তু তাদের অগ্রযাত্রার গতি কমাতে পারেনি।
গত ২৩ বছর ধরে রাশিয়া শাসন করছেন পুতিন। দীর্ঘ এই শাসনামলে প্রথমবার তিনি এতটা গুরুতর চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হলেন।
শনিবার এক ভাষণে পুতিন উদ্ভূত পরিস্থিতিকে ‘রাষ্ট্রদ্রোহ’ বলে বর্ণনা করেছিলেন। একে তিনি এক শতাব্দী আগে রাশিয়ার গৃহযুদ্ধের সঙ্গে তুলনা করে ভাগনারের বিদ্রোহকে কঠোর হাতে দমনের প্রতিজ্ঞাও করেছিলেন।
ইউক্রেইনের দোনেৎস্ক প্রদেশে রাশিয়া নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের নেতার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানিয়েছিল, মস্কো অভিমুখে যাত্রা করা ভাগনার দলটিতে প্রায় পাঁচ হাজার যোদ্ধা ছিল যাদের নেতৃত্বে ছিলেন জ্যেষ্ঠ ওয়াগনার কমান্ডার দিমিত্রি উৎকিন।
ভাগনার বাহিনী যেভাবে দ্রুত গতিতে মস্কো অভিমুখে অগ্রসর হচ্ছিল তা দারুণ চিন্তায় ফেলে দিয়েছিল নগরীর মেয়র সের্গেই সোবিয়ানিনকে। তিনি সেটিকে ‘কঠিন পরিস্থিতি’ বর্ণনা করে মস্কোকে ‘সন্ত্রাস বিরোধী অভিযান অঞ্চল’ বলে ঘোষণা করেছিলেন।
ঝুঁকি কমাতে সোমবার মস্কোয় ‘নন-ওয়ার্কিং ডে’ বা ‘কর্মহীন দিবস’ বলেও ঘোষণা করা হয়। বাসিন্দাদেরও ভ্রমণ এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল।
নগরীর সড়কগুলোতে নিরাপত্তা বাহিনীর সংখ্যা বাড়ানো হয় এবং ধাতব ব্যারিকেড দিয়ে বিখ্যাত রেড স্কয়ারে যাওয়ার পথও আটকে দেওয়া হয়।
প্রিগোজিনের দাবি ছিল, তার যোদ্ধারা দুর্নীতিবাজ ও অযোগ্য কমান্ডার যারা ইউক্রেইন যুদ্ধের জন্য দায়ী তাদের ক্ষমতা থেকে অপসারণ করতে ‘ন্যায়ের মিছিলে’ নেমেছে।
শেষ পর্যন্ত বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কোর মধ্যস্থতায় থামানো যায় মস্কো অভিমুখে ‘যুদ্ধযাত্রা’ শুরু করা ইয়েভগেনি প্রিগোজিনের ভাগনার বাহিনীকে।
লুকাশেঙ্কোর কার্যালয় থেকে জানানো হয়, ‘তাদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেওয়ার বিনিময়ে’ ভাগনার যোদ্ধারা ফিরে যেতে রাজি হয়েছে।
বেলারুশের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ সংস্থা বেল্টা জানায়, প্রিগোজিনকে ‘যুদ্ধযাত্রা’ থামাতে রাজি করানোর পর লুকাশেঙ্কো নিজেই টেলিফোনে পুতিনকে সেই খবর দিয়েছেন। পুতিনের অনুমতি নিয়েই লুকাশেঙ্কো ভাগনার প্রধানের সঙ্গে কথা বলেছিলেন।