উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো দেশে সবধরনের পণ্য সর্বোচ্চ খুচরা বিক্রয় মূল্যে বিক্রি হলেও সিগারেটের ক্ষেত্রে তা অনুসরণ করছে না । ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্যাকেটে লেখা মূল্যের চেয়ে স্তরভেদে সিগারেট শতকরা ৫ থেকে ২০ ভাগ বেশি দামে বিক্রি হয়েছে। এভাবে বেশিদামে সিগারেট বিক্রি করে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা কর ফাঁকি দিয়েছে তামাক কোম্পানীগুলো।
অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরো (বিইআর) ও বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসি (বিএনটিটিপি) এর এক গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে। আজ রোববার সকাল ১১ টায় অনলাইন মিটিং প্লাটফর্ম জুম-এ ‘তামাক কোম্পানির মূল্য কারসাজি : প্রতিরোধে করণীয়’ শীর্ষক ওয়েবিনারে এ গবেষণার ফল প্রকাশ করা হয়।
তামাকজাত দ্রব্যের (সিগারেট) খুচরা বিক্রয়মূল্যে জাতীয় বাজেটে মূল্য ও কর পরিবর্তনের প্রভাব নিরূপণে একটি সমীক্ষা শীর্ষক গবেষণা ফলাফলে দেখা যায়, সিগারেট কোম্পানিগুলো প্যাকেটে লেখা মূল্য বা তার চেয়ে বেশি মূল্যে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে সিগারেট সরবরাহ করে। খুচরা বিক্রেতারার চেয়ে বেশি মূল্যে ক্রেতাদের কাছে সিগারেট বিক্রি করে। বিক্রয়মূল্যের ওপর কর আদায় সম্ভব হলে গত অর্থবছরেই আরও প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় হতো।
গবেষণার ফলাফলে বলা হয়েছে, অতিউচ্চ স্তরের সিগারেটের ২০ শলাকার প্যাকেটে মুদ্রিত খুচরা মূল্য ২৮৪ টাকা হলেও গত অর্থবছরে বিক্রি করা হয়েছে গড়ে ৩০৬.১৩ টাকায়। উচ্চ স্তরের সিগারেট ২২২ টাকার পরিবর্তে গড়ে প্রায় ২৩৭.৫৫ টাকায়, মধ্যম স্তরের সিগারেট ১৩০ টাকার পরিবর্তে ১৩৬.৯৬ টাকায় এবং নিম্ন স্তরের সিগারেট ৮০ টাকার পরিবর্তে ৯৫.৯৬ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। এভাবে ২০২২-২৩ অর্থবছরে অতিউচ্চ স্তরে ৬১৭.৮৭ কোটি, উচ্চ স্তরে ২৪৫.৪৫ কোটি, মধ্যম স্তরে ১৮১.৮৯ এবং নিম্ন স্তরে ৩৩৯৯.২৩ কোটি টাকা রাজস্ব হারিয়েছে সরকার।
ওয়েবিনারে বক্তারা বলেন, তামাক কোম্পানির মূল্য কারসাজির পরিপ্রেক্ষিতে এবারের বাজেটে সিগারেটের মোড়কে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য উল্লেখ নিশ্চিত করার জন্য এসআরও জারি করা হয়েছে। এসআরও-তে বলা হয়েছে, ‘সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যের অধিক মূল্যে কোন পর্যায়েই সিগারেট বিক্রয় করা যাইবে না’। কিন্তু তামাক কোম্পানিগুলো এই নীতি মানছে না। তারা বর্তমানে আরও আগ্রাসী হয়ে আগের চেয়ে বেশি দামে সিগারেট বিক্রি করছে। পাশাপাশি পুরনো ব্যান্ডরোলের সিগারেট বিক্রি করতে হলে মোড়কে নতুন দামের সিল সংযুক্ত করে বিক্রির আদেশ দেয়া হলেও তামাক কোম্পানিগুলো তা মানছে না। এভাবে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
গবেষণা প্রতিবেদনে, এমআরপিতে বিক্রির ক্ষেত্রে সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের জোরালো মনিটরিংসহ কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ, সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি এবং কর ফাঁকি বন্ধ করতে সুনির্দিষ্ট করারোপ পদ্ধতির প্রচলন, তামাকজাত দ্রব্যের বাজার ও বিক্রয় পর্যবেক্ষণ ও কর আদায়ে ডিজিটাল ব্যবস্থা প্রচলন, সিগারেটের চার স্তরভিত্তিক কর কাঠামো ধারাবাহিকভাবে এক স্তরে নিয়ে আনা, সিগারেটের খুচরা শলাকা বিক্রি নিষিদ্ধ, কর ফাঁকি রোধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং একটি শক্তিশালী তামাক কর নীতি প্রণয়নের সুপারিশ করা হয়।
ওয়েবিনারে এ গবেষণার ওপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএনটিটিপির প্রজেক্ট অফিসার ইব্রাহীম খলিল। অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞ আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, গাইবান্ধা-১ আসনের সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. রুমানা হক, আন্তর্জাতিক সংস্থা দ্য ইউনিয়নের কারিগরি পরামর্শক অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম তাহিন এবং একাত্তর টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি ও তামাক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক গবেষক সুশান্ত সিনহা। ওয়েবিনারটি সঞ্চালনা করেন বিএনটিটিপি’র গবেষণা সহযোগী ইশরাত জাহান ঐশী।