ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহতের ঘটনাতেই শুধু নয়, একযুগ-দেড়যুগ আগের বিভিন্ন বিচ্ছিন্ন ঘটনায়ও নানাজনকে বাদি সাজিয়ে শত শত নিরীহ মানুষকে আসামি সাজিয়ে চলছে বড় বাণিজ্য। চট্টগ্রামের থানায়-থানায় আদালতে-আদালতে মামলাবাণিজ্য চলছে। পুলিশ শুধু নয়, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নামেও চলছে অমানবিক এই ব্যবসা। মামলায় নাম বসানো ও সরানো নিয়ে উড়ছে কোটি কোটি টাকা। পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা বলছেন, নেতাদের কাছে তারা অসহায়। কিছু আইনজীবীও এসবে সরাসরি জড়িত।
৫ আগস্টের পর থেকে শত শত নিরীহ মানুষকে আসামি বানিয়ে একের পর এক মামলা করছেন রাঙ্গুনিয়ার নাজিম উদ্দিন। হাছান মাহমুদের একসময়কার ঘনিষ্ঠ নাজিম দুই মাস আগে যুবদল থেকে বহিষ্কৃত হন।
৫ আগস্টের পর থেকে শত শত নিরীহ মানুষকে আসামি বানিয়ে একের পর এক মামলা করছেন রাঙ্গুনিয়ার নাজিম উদ্দিন। হাছান মাহমুদের একসময়কার ঘনিষ্ঠ নাজিম দুই মাস আগে যুবদল থেকে বহিষ্কৃত হন।
ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আইনজীবীদের চক্রটিই সাজানো এসব মামলায় মূল ভূমিকা রাখে। মামলার এজাহার সাজানো থেকে আসামির তালিকা বানানো, সেই তালিকা আবার আসামিদের কাছে পাঠানো এবং টাকা দিলে নাম কাটানো— এ সবকিছুতে তারাই চক্রের হয়ে মূল ভূমিকা পালন করেন।
মামলা বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িতদের ছাড় নেই— এমন কথা বিএনপি ও জামায়াতের শীর্ষ নেতারা বারবার বলে আসলেও মামলাবাণিজ্য উল্টো আরও ফুলেফেঁপে ওঠছে। অথচ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, মামলার প্রকৃত আসামিরা সবাই ধরাছোঁয়ার বাইরে। চট্টগ্রাম প্রতিদিনের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ৯৫ ভাগ ক্ষেত্রে ঘটনাস্থলে না থাকা লোকজনের নাম আসামি হিসেবে দেওয়া হচ্ছে উদ্দেশ্যমূলক এসব মামলায়। বাণিজ্যের কথা চিন্তা করে এদের মধ্যে ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের সঙ্গে রাখা হচ্ছে একেবারেই নিরীহ লোকজনকেও।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যূত হওয়ার পর থেকে শুধু চট্টগ্রামেই মামলার হুমকি দিয়ে আদায় করা হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। হয়রানি থেকে বাঁচতে কিংবা মামলায় আসামি হওয়ার ভয়ে অনেকেই টাকা দিয়ে নিস্তার পেতে চাইছেন। আবার টাকা দিতে না পারায় অনেককে হয়রানিমূলক বিভিন্ন মামলায় ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে টিম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে অনেক ভুক্তভোগীই এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, একশ্রেণীর আইনজীবীর সহায়তায় শুরুতে বিএনপি ও জামায়াতের নেতারা এমন বাণিজ্য চালিয়ে এলেও সুযোগ বুঝে এই বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়ছে টাউট ও মাদকাসক্তরাও।
চট্টগ্রাম প্রতিদিনের অনুসন্ধানে জানা গেছে, ৫ আগস্টের পর শুধু রাঙ্গুনিয়ার এক লোককেই ‘বাদি’ সাজিয়ে একাধিক মামলা করা হয়েছে চট্টগ্রাম আদালতে। আবার ওই কথিত বাদি আরও ১৫-২০ জনকে বাদি সাজিয়ে মামলা করেছেন একের পর এক। প্রতিটি মামলা দায়েরের আগে বেশ খানিকটা সময় হাতে রেখে শুরু হয় নাম সরানোর জন্য টাকা দাবি। চাহিদামতো টাকা পাওয়ার পর কখনও টাকার বিনিময়ে, কখনও ‘কম্পিউটার মিসটেকে’র অজুহাত দেখিয়ে মামলা থেকে নাম সরানোর আবেদনও করা হয় বারেবারে। মামলাবাণিজ্য ঘিরে গড়ে ওঠা এই চক্রের সঙ্গে জামায়াতপন্থী কয়েকজন আইনজীবী ছাড়াও চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির এক নেতার নামও উঠে এসেছে চট্টগ্রাম প্রতিদিনের অনুসন্ধানে। আগস্টের পর থেকে সংঘবদ্ধ এই চক্র হাতিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা। এই চক্রের তৎপরতা নিয়ে চট্টগ্রাম প্রতিদিনের হাতে এসেছে বিস্ময়কর সব তথ্য ও প্রমাণ। আগামী পর্বে থাকছে এ নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সম্প্রতি রাঙামাটি আদালতে দায়ের করা এক ‘গায়েবি’ মামলার এজাহারে ২৪৮ জনকে আসামি করা হয়। রাঙামাটির সিনিয়র আইনজীবী ছাড়াও আসামি হিসেবে এতে ঢোকানো হয় চট্টগ্রামের সনাতনী ২০ জন আইনজীবী, এমনকি চট্টগ্রামের ৫ সাংবাদিকের নামও। এই মামলার কথিত বাদির দিনকাল এক ‘৫ আগস্টে’ই পাল্টে যায়। চট্টগ্রামে রাঙ্গুনিয়ার বাসিন্দা কথিত ওই বাদির দিন কাটছে এখন মামলা ঠুকে ঠুকে। তার আড়ালে রয়েছে আইনজীবীদের একটি সিন্ডিকেট। আসামি কারা হবে— এই সিন্ডিকেটই সেটা ঠিক করে। তারাই বাদি সাজায়, আবার তারাই সাক্ষী সাজায়। বাদি কিংবা সাক্ষীরা কেউই জানেন না, তাদের মামলায় আসামি কারা? মামলার আগে সপ্তাহ-দুই সপ্তাহ ধরে সাজানো ও পাতানো আসামিদের মোবাইলে মোবাইলে কৌশলে পৌঁছে দেওয়া হয় মামলার কপি। এরপর সাজানো আসামির পরিচিত লোকজনকে দিয়ে করানো হয় ফোন। প্রস্তাব দেওয়া হয় টাকা দিয়ে নাম কাটানোর। আসামিকে সাংকেতিক শব্দে ‘গরু’ বানিয়ে চলে দরকষাকষি। আবার হুমকিও দেওয়া হয়, টাকা না দিলে নাম যাবে আরও মামলায়।
এভাবে গায়েবি সব মামলায় আসামির তালিকায় ওঠে যাচ্ছে অজানা-অচেনা নাম। ৮-১০ বছর আগে পাহাড়ধসে মৃত পরিবারের ‘স্বজন’ সেজেও মামলা করা হচ্ছে। গত ৫ ডিসেম্বর রাঙামাটি পার্বত্য জেলার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ২০১৭ সালে সংঘটিত এক পাহাড়ধসের ঘটনায় সনাতনী সম্প্রদায়ের ২০ জন আইনজীবী ও চট্টগ্রামের চার সাংবাদিকসহ ২৪৮ জনকে আসামি করে মামলা করতে গেলে প্রকাশ্যে বেরিয়ে পড়ে সংঘবদ্ধ এক চক্রের পরিচয়। পরে অভিযোগটি ভুয়া বুঝতে পেরে মামলার ফাইলিং আইনজীবী অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন এজাহারের কপি ছিঁড়ে ফেলেন এবং মামলা করতে অনীহা প্রকাশ করেন। ওই মামলার আসামির তালিকায় নাম ছিল রাঙামাটি আইনজীবী সমিতির অনেক সিনিয়র সদস্যের নামও। একজনকে বাদি সাজিয়ে রাঙামাটি আদালতে ছুটে যান চট্টগ্রামের পাঁচ আইনজীবী। চট্টগ্রাম প্রতিদিনের হাতে আসা ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, চট্টগ্রামের ওই পাঁচ আইনজীবীর মধ্যে তিনজনই জামায়াতপন্থী আইনজীবী হিসেবে পরিচিত।
মামলার ওকালতনামায় স্বাক্ষর করা অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন বলেন, ‘মামলাটি করার জন্য চট্টগ্রাম শহর থেকে পাঁচজন আইনজীবী এসেছিলেন। তারা রাজনৈতিক তদবির করেন এবং এজাহারটি লিখে আনেন। অভিযোগটি পড়ার সুযোগ না দিয়ে তারা প্রথমে আমার স্বাক্ষর নেয়। পরে ওই এজাহারে বিভিন্ন আইনজীবী, আমার আত্মীয়স্বজন, এমনকি আমাদের আইনজীবী সমিতির সভাপতিরও নাম দেখতে পাই। তখন তাদের হাত থেকে এজহারের কপিটি নিয়ে নিই এবং মামলা করতে অস্বীকৃতি জানাই।’
অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন বলেন, ‘তারা মামলাটি অন্য কোনোভাবে করার চেষ্টা করতে পারে। তবে ভুয়া মামলা করতে আসার বিষয়টি রাঙামাটি আদালতের সকল আইনজীবী জানেন। আশা করি, কেউ এই মামলা ফাইলিং করবেন না।’
মামলাটি শেষ পর্যন্ত করা না গেলেও তাতে আসামি করার কথা বলে চক্রের কয়েকজন সদস্য বিভিন্ন লোকজনকে ফোন দিয়ে চাঁদা দাবি করছেন বলে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে জানা গেছে। চক্রের সদস্যরা ফোন করে করে বলছেন, মামলার আসামি হওয়া থেকে বাঁচতে হলে তাদের টাকা দিতে হবে। নইলে ফাঁসিয়ে দেওয়া হবে আরও বিভিন্ন মামলায়।
চাঁদা চেয়ে হোয়াটসঅ্যাটে পাঠানো ওই মামলার কপিতে রয়েছে আইনজীবীর স্বাক্ষরও। মামলার কপিতে ২৪৮ জনকে আসামি হিসেবে দেখানো হয়েছে। আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের কিছু নেতা ছাড়া আসামির তালিকায় থাকা লোকজন বেশিরভাগই ঘটনাস্থলের নয়, বাইরের লোক। আসামির তালিকায় রয়েছেন হিন্দু ধর্মাবলম্বী ২০ জন আইনজীবী এবং চট্টগ্রামের চার সাংবাদিক। আসামির তালিকায় থাকা কয়েকজন স্বীকার করেছেন, মুঠোফোনে মামলার কপি পাঠিয়ে নাম বাদ দেওয়ার কথা বলে তাদের কাছ থেকে টাকা দাবি করা হয়েছে।
জানা গেছে, ২০১৭ সালে ১৩ জুন রাঙামাটি পার্বত্য জেলার কাউখালীর কাশখালী এলাকায় একটি পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটে। মাটিচাপায় মারা যান ফাতেমা বেগম (৬০), মো. ইসহাক (৩৫) ও মো. মনির (২৫) নামে তিনজন। এ ঘটনায় তখন একটি মামলা হয় এবং তা নিষ্পত্তিও হয়ে যায়। কিন্তু ৫ আগস্টের পর এ ঘটনা দেখিয়ে চট্টগ্রাম আদালতে বেশ কয়েকটি মামলা হয়। সর্বশেষ ৫ ডিসেম্বর রাঙামাটি আদালতে ওই ঘটনায় মামলা করতে যান মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন (৪০) নামে ব্যক্তি।
নাজিম উদ্দিন নামের এই লোক রাঙ্গুনিয়ার ১৩ নম্বর ইসলামপুর বাচুর মোহাম্মদ পাড়ার মৃত নাছির উদ্দিনের ছেলে। তিনি জাতীয়তাবাদী যুবদলের চট্টগ্রাম উত্তর জেলার সহ-দপ্তর সম্পাদক ছিলেন। সংগঠনবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার সুস্পষ্ট অভিযোগে গত ৫ সেপ্টেম্বর জাতীয়তাবাদী যুবদলের দপ্তর সম্পাদক নুরুল ইসলাম সোহেল স্বাক্ষরিত এক আদেশে তাকে বহিস্কার করা হয়।
আদালত সূত্র জানিয়েছে, ৫ আগস্টের পর মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন বাদি হয়ে চট্টগ্রাম আদালতে একাধিক মামলা করেছেন। আবার সাক্ষী হয়েছেন বেশ কয়েকটি মামলায়। মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিনের করা মামলায় আসামির তালিকায় কোনোটিতে ১১০, কোনোটিতে ১১৬ জন, একটিতে ১৬৭ জন, আবার অপর একটিতে ২৭৮ জনের নাম উঠেছে। অবাক করার বিষয় হলো, আগের এসব মামলায় তার ঠিকানা রাঙ্গুনিয়ার ইসলামপুর দেখানো হলেও ৫ ডিসেম্বর করতে যাওয়া মামলায় রাঙামাটির কাউখালীতে তার বর্তমান ঠিকানা দেখানো হয়। আদালত সূত্র বলছে, চট্টগ্রাম শহরের ঠিকানা দেখিয়েও মামলা করেছেন এই নাজিম উদ্দীন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বহিষ্কৃত যুবদল নেতা নাজিম উদ্দিন একসময় সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। এলাকায় তিনি ‘মাইকেল’ নামে পরিচিত।
জানা গেছে, নাজিম উদ্দীন অন্তত ছয়টি মামলার অভিযুক্ত আসামি। এগুলো হচ্ছে— ১. চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া থানার এফআইআর নং-২, তারিখ ৩ সেপ্টেম্বর ২০০৯: ধারা- ৪৪৮/৩৮৫/৩৪ পেনাল কোড-১৮৬০। ২. রাঙ্গুনিয়া থানার এফআইআর নং-২, তারিখ- ৩ সেপ্টেম্বর ২০০৯: ধারা- ৪৪৮/৩৮৫/৩৪ পেনাল কোড-১৮৬০। ৩. রাঙ্গুনিয়া থানার এফআইআর নং-১, তারিখ ১ নভেম্বর ২০০৫; ধারা- ৩২৩/৩৭৯ পেনাল কোড-১৮৬০। ৪. রাঙ্গুনিয়া থানার এফআইআর নং-১৭, তারিখ ২৫ মার্চ ২০১২; ধারা- ২৬(১)/১০ ১৯২৭ সালের বন আইন; তৎসহ ১৪৩/৪৪৭/৩৫৩/৩৩২ পেনাল কোড-১৮৬০। ৫. সিএমপির কোতোয়ালী থানার এফআইআর নং-১২/৯৫৯, তারিখ ৩ অক্টোবর, ২০১৮। ধারা- ১৫(৩) ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইন: তৎসহ ৩/৪ ১৯০৮ সালের বিস্ফোরক দ্রব্য আইন; তৎসহ ১৪৭/১৪৮/১৪৯/১৮৬/৩০৭/ ৩৩২/৩৫৩ পেনাল কোড-১৮৬০। ৬. সিএমপির পতেঙ্গা মডেল থানার এফআইআর নং-১৩, তারিখ ২৬ আগস্ট, ২০০৮; ধারা- ১৯(৪) ১৮৭৮ সালের অস্ত্র আইন। তবে পুলিশ বলছে, তার বিরুদ্ধে আরও মামলা থাকতে পারে।
আইনজীবীরা বলছেন, সাধারণত পাহাড়ধসের মামলাগুলো পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে করা হলেও এ মামলায় আসামি করা হয়েছে রাজনৈতিক ব্যক্তি, আইনজীবী, সাংবাদিক ও সাধারণ মানুষকে।
এ বিষয়ে জানতে মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিনের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও প্রতিবারই তিনি কল কেটে দেন। পরে বিষয়টি জানিয়ে তার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে ক্ষুদেবার্তা পাঠানো হলেও কোনো সাড়া মেলেনি।
রাঙামাটি আদালতে এই মামলা করতে যাওয়া চট্টগ্রাম আদালতের পাঁচ আইনজীবীর মধ্যে ভিডিওচিত্রে দেখা গেছে, চট্টগ্রাম আদালতে এপিপি জিয়াউল হক জিয়াকে। তিনি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘মামলটি আমরা করিনি। মামলায় রাঙামাটি আইনজীবী সমিতির বর্তমান সভাপতি রফিক সাহেব ও সাবেক পিপির নাম ছিল। আমরা তাদের নাম কেটে দিয়েছি। কোনো ব্যক্তি যেন হয়রানি না হয়, সেজন্য আমরা মামলাটি নিয়ে আসছি। ওখানে মারা গেছে ১৫০ জন। যারা ভিক্টিম হয়েছে তারাই মামলাগুলো করছে। তারা এতোদিন মামলাগুলো করতে পারে নাই।’
চট্টগ্রাম আদালতে ২০ জন আইনজীবী ও চার সাংবাদিকও ওই ঘটনায় জড়িত কিনা— এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি তো ওখানকার আইনজীবী না। মামলাটি করছে ওখানকার আইনজীবী। মামলা করতে ওখানকার আইনজীবী লাগে এবং ওখানকার সমিতির সদস্য হতে হয়। আমাদের নিয়ে গেছে। আমরা বেড়ানোর উদ্দেশ্যে গিয়েছি। এই সুযোগে মামলাটাও শুনানি করলাম। দেখলাম ওখানকার আইনজীবীরা আসামি হয়ে গেছে, সেজন্য মামলাটি করিনি, চলে এসেছি। যারা নিরীহ ব্যক্তি, ওদের বাদ দিয়ে মামলা করবো।’
চট্টগ্রাম আদালতে নাজিম উদ্দিনের বাদি হয়ে একাধিক মামলা করার বিষয়ে জিয়াউল হক জিয়া বলেন, ‘আকবরশাহে তার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আকরশাহ এবং ওখানে তার বাড়িঘর আছে, সেজন্য তিনি বাদি হয়েছেন। তাদের মা মনে হয় দুইজন। তাদের অনেক ভাই আছে। কাউখালীতেও তাদের বাড়ি আছে, আমরা ওইদিন ভাতও খেয়েছি।’
নাম ব্যবহার করে চাঁদা চেয়ে আসামিদের মোবাইলে মামলার কপি পাঠানোর বিষয়ে এ আইনজীবী জিয়াউল হক বলেন, ‘আমি এ মামলার আইনজীবী নই। আমি আইনজীবী সমিতির দুইবারের নির্বাচিত সদস্য এবং বর্তমান এডিশনাল পিপি। আমার কালো টাকার দরকার নেই। আমি নিট অ্যান্ড ক্লিনভাবে চলি। কেউ আমার নামে টাকা চাইলে, প্রমাণ হলে ব্যবস্থা নেবো।’
অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক জিয়া নিজেকে একজন বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর লোক এবং সাবেক আইন কলেজের শিবিরের সভাপতি বলে জানান।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘এসব বাণিজ্যের মামলা। এ মামলাগুলো নিয়ে আমাদের কোনো কথা নেই। এরা টাউট-বাটপার। এসব করে ধান্ধাবাজির জন্য। আপনারা লিখে দেন, যেন এসব মামলা না নেয়। আমার পক্ষ থেকে যা করার, তা আমি করবো। মামলা করে মানুষকে জিম্মি করে, ফায়দা লোটে। ওর নাম নাজিম উদ্দিন মাইকেল মনে হয়। কিছুদিন আগে তাকে আমি আদালতে মারতে চেয়েছিলাম। আমি জিয়াকে ডাকব। আরও কয়েকজন আমাকে অভিযোগ করেছে। ওরা টাউট, আপনি লিখতে পারেন।’
চট্টগ্রাম প্রতিদিনের অনুসন্ধানে দেখা গেছে