পলোগ্রাউন্ড মাঠ থেকে চট্টগ্রামের ১৯টি প্রকল্পের উদ্বোধন করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, চট্টগ্রাম আমার সবচেয়ে প্রিয় জায়গা। তাই আমি চট্টগ্রামের কথা সব সময় মনে করি। চট্টগ্রামের উন্নয়নে আমরা সব সময় কাজ করে যাচ্ছি। আমরা উন্নয়ন করি। মানুষের কল্যাণে কাজ করি। চট্টগ্রামে আজ ২৯ প্রকল্পের উদ্বোধন ও চার প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছি। আমি এ প্রকল্পগুলো চট্টগ্রামবাসীকে উপহার দিয়ে গেলাম।
রবিবার (৪ নভেম্বর) চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগের উদ্যোগে নগরের পলোগ্রাউন্ড মাঠে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
উদ্বোধন করা প্রকল্পের নাম তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা জনগণের টাকা মেরে খাই না। আমরা চাই জনগণ আর দেশের উন্নতি। চট্টগ্রামকে এগিয়ে নিতে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি ও হাটহাজারী উপজেলায় হালদা নদী ও ধুরং খালের তীর সংরক্ষণ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প, সন্দ্বীপ উপজেলার ৭২ নম্বর পোল্ডারের ভাঙনপ্রবণ এলাকায় স্লোপ প্রতিরক্ষা কাজের মাধ্যমে পুনর্বাসন প্রকল্প ও বাঁশখালী উপজেলায় পোল্ডারের সমন্বয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অংশের স্থায়ী পুনর্বাসন প্রকল্প উদ্বোধন করলাম।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা চাই আমাদের সন্তানরা লেখাপড়ায় এগিয়ে যাক। তারা মানুষের মত মানুষ হয়ে দেশের কল্যাণে ভূমিকা রাখবে। তাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় কিছু প্রকল্প আমরা আজ উদ্বোধন করে দিয়েছি। কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের অধীনে সীতাকুণ্ড টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ফটিকছড়ি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং রাউজান টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবন নির্মাণ। চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থানাধীন দারুল উলুম আলিয়া মাদরাসার একটি ছয়তলা ভবন এবং সীতাকুণ্ড টেকনিক্যাল স্কুলের একটি পাঁচতলা ভবন ও একটি চারতলা প্রশাসনিক ভবন, ওয়ার্কশপ, একতলা সার্ভিস এরিয়া ভবন নির্মাণকাজ শুরু হবে।
তাছাড়া মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অধীনে কোতোয়ালী থানাধীন গুল-এ-জার বেগম সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছয়তলা ভবন, কাপাসগোলা সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছয়তলা ভবন, চট্টগ্রাম সরকারি কলেজে ১০ তলা একাডেমিক ভবন, কুসুমকুমারী সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছয়তলা ভবন, পূর্ব বাকলিয়া সিটি করপোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়ের ছয়তলা ভবন, মীরসরাই উপজেলার করেরহাট কে এম উচ্চ বিদ্যালয়ের চারতলা ভবন, পাঁচলাইশ থানাধীন বন গবেষণাগার উচ্চ বিদ্যালয়ের ছয়তলা ভবন, বোয়ালমারী উপজেলাধীন হাজী মোহাম্মদ জানে আলম উচ্চ বিদ্যালয়ের চারতলা ভবন, পটিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের চারতলা ভবন, সন্দ্বীপের সন্তোষপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের চারতলা ভবন এবং ডবলমুরিং থানাধীন সরকারি সিটি কলেজে ১০ তলা একাডেমিক ভবন তৈরি হবে। এছাড়াও পলোগ্রাউন্ড বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি ভবন সম্প্রসারণ, সরকারি মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়ের লালদিঘি মাঠের ছয় দফা মঞ্চ নির্মাণসহ সংস্কার কাজ এবং খুলশী থানাধীন সিএমপি উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি ভবনের সম্প্রসারণ কাজ উদ্বোধন করেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, স্বাস্থ্যসেবার দিকেও নজর রয়েছে আমাদের। সাধারণ মানুষ বাঁচার মত বাঁচবে- এটাই আমরা চাই। স্বাস্থ্যসেবা খাতকে আরো এগিয়ে নিতে মীরসরাইয়ে হিংগুলি ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্র এবং লোহাগড়ায় চুনতি ১০ শয্যাবিশিষ্ট মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্র এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিটাক চট্টগ্রাম কেন্দ্রের নারী হোস্টেল নির্মাণ করে দিচ্ছি। প্রবাসীদের প্রশিক্ষণের জন্য নাসিরাবাদে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনে শিক্ষানবিস প্রশিক্ষণ দপ্তর সংস্কার ও আধুনিকায়ন কাজ করে দেব। ব্যবসা বাণিজ্যের উন্নয়নে চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য দুটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন টাগবোট সংগ্রহ শীর্ষক প্রকল্প ও চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ড এবং টার্মিনালের জন্য প্রয়োজনীয় ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ শীর্ষক প্রকল্প ও দেওয়ানহাটে হর্টিকালচার সেন্টারে একটি প্রশিক্ষণ ও অফিস হবে।
তাছাড়া নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনে চট্টগ্রামের মীরসরাই ও সন্দ্বীপ অংশে জেটিসহ আনুষঙ্গিক স্থাপনাদি নির্মাণ, আনোয়ারায় বাংলাদেশ মেরিন অ্যাকাডেমির আধুনিককরণ, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকায় আধুনিক সুযোগ সুবিধাসম্পন্ন জাতিসংঘ সবুজ উদ্যান স্থাপন এবং বিদ্যুৎ বিভাগের অধীনে চট্টগ্রামস্থ বিপিসি ভবন নির্মাণ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছি। সবগুলোই প্রকল্প আমি আপনাদের উপহার দিয়ে গেলাম।
চট্টগ্রামের সার্বিক উন্নয়নমূলক কাজের কথা তুলে ধরে সরকার প্রধান বলেন, বিএনপির আমলে চট্টগ্রামের কোন উন্নতিই হয়নি। বিএনপি মানুষের ক্ষতি করে, বিভ্রান্ত করে। তারা দুটো কাজ ভালো জানে। একটি হলো খুন আরেকটি হলো লুটপাট। আর আমরা ক্ষমতায় এসে সারাদেশের পাশাপাশি চট্টগ্রামের উন্নয়নে জোর দিয়েছি। কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দর করে দিচ্ছি। চট্টগ্রামে মেট্রোরেল হবে। মিরসরাইয়ে অর্থনৈতিক অঞ্চল করেছি। সেখানে বিনিয়োগ আসছে। বিপুল পরিমাণ কর্মসংস্থানর সুযোগ তৈরি হবে সেখানে। পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে মেরিন ড্রাইভ করেছি। চট্টগ্রাম বন্দর সম্প্রসারণ করে দিচ্ছি। তাই বে-টার্মিনাল করে দিচ্ছি। ঢাকা-চট্টগ্রামের রাস্তা ছয় লেইন করে দেবো।
শেখ হাসিনা বলেন, মহিউদ্দীন চৌধুরী যখন বেঁচে ছিলেন তখন সব সময় আমাকে বলতেন টানেল করে দেয়ার কথা। আজ তিনি বেঁচে নেই। কিন্তু তাঁর কথা মনে পড়ে। আমরা আজ কর্ণফুলী টানেল বাস্তবায়ন করেছি। আনোয়ারার সাথে যোগাযোগ এখন সহজ হবে। বাঁশখালীতে বিদ্যুৎকন্দ্র নির্মাণ হচ্ছে। সাব মেরিনের মাধ্যমে সন্দ্বীপে বিদ্যুৎ দিয়েছি। কাজেই চট্টগ্রাম অঞ্চলে বিদ্যুতের সংকট পড়বে না।
পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়নের কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের কি অবস্থা ছিল? ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করে শান্তি চুক্তি করেছি। সারাদেশে শতসেতু করে দিয়েছি। এরমধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামেই রয়েছে ৪৫টি। সীমান্তে যোগাযোগ সহজ করেছি।
ডিজিটালাইজেশনের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করে দেশকে ডিজিটাল করেছি। বিএনপির আমলে একটা মোবাইল সেট কিনতে লাখ টাকার উপরে লাগতো। আর এখন সবার হতে হাতে মোবাইল ফোন।
রিজার্ভের টাকা মানুষের কল্যাণে খরচ করছি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা রিজার্ভের টাকা মেরে খাইনি। সব জনগণের কল্যাণে ব্যয় করেছি। করোনার দুঃসময়ে ব্যবসায়ীদের প্রণোদনা দিয়েছি। বিনা পয়সায় মানুষকে ভ্যাক্সিন দিয়েছি। জ্বালানি তেলে ভর্তুকি দিয়েছি। আমরা চলতি অর্থবছরে ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেছি। সকল সরকারি কর্মচারিদের বেতন-ভাতা বাড়িয়েছি। ৩৫ লাখ মানুষকে বিনা পয়সায় ঘর করে দিয়েছি। আমরা চেয়েছি সকলের মাথা গোজার ঠাঁই হোক।