বৃহস্পতিবার , ২৫শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
×

মোস্তফা শামীম ৩৬ এক বিন্দুতে মিলেমিশে একাকার আর্জেন্টিনা ও মেসির

লিওনেল মেসি আর্জেন্টিনার দীর্ঘ ৩৬ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়েছেন। তার নেতৃত্বে কাতার বিশ্বকাপে শিরোপা জেতে আলবিসেলেস্তারা। এই শিরোপা তাকেও অমরত্ব এনে দিয়েছে। কেননা ক্লাব ক্যারিয়ারে অসংখ্য অর্জন হলেও জাতীয় দলের হয়ে বেশ পিছিয়ে ছিলেন তিনি। অবশেষে কোপা আমেরিকা, ফিনালিসিমার পর বিশ্বকাপ তার ক্যারিয়ার পূর্ণ করে।

গত ২৪ জুন আবার মেসি ৩৬তম জন্মদিন উদযাপন করেছেন। আর্জেন্টিনার ৩৬, এর পর মেসির ৩৬ মিলেমিশে একাকার। সৃষ্টিকর্তা যেন তাদের এক বিন্দুতে মিলিয়ে দিয়েছেন।

যদিও মেসির জাতীয় দলের পথচলার শুরুটা ছিল ভুলে যাওয়ার মতো। কেননা ২০০৫ সালে হাঙ্গেরির বিপক্ষে অভিষেকেই লাল কার্ড দেখেছিলেন তিনি। এরপর যে ম্যাচে অভিষেক গোল দিয়েছেন, সেই ম্যাচটি আর্জেন্টিনা ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ৩-২ গোলে হারে।

কিন্তু মেসি যে পেছনে ফিরে তাকাবার মানুষ নন, তা তিনি বারবার প্রমাণ করেছেন। একটি পর একটি গোল করে তিনি এখন আর্জেন্টিনার সর্বকালের সেরা গোলদাতা।

আর্জেন্টিনার হয়ে মেসির গোল

মেসি আর্জেন্টিনার হয়ে এখন পর্যন্ত ১৭৫টি ম্যাচ খেলেছেন। যেখানে গোল করেছেন ১০৩টি। ছয়টি বিশ্বকাপে ২৬ ম্যাচে ১৩টি গোল করেছেন। কোপা আমেরিকায় ৩৪ ম্যাচে করেছেন ১৩ গোল। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ৬০ ম্যাচে ২৮ গোল করেছেন। ফিনালিসিমায় এক ম্যাচে কোনো গোল করতে পারেননি। আর আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে ৫৪ ম্যাচে করেছেন ৪৮ গোল।

বিশ্বকাপে মেসির গোল

আগেই বলা হয়েছে, ছয়টি বিশ্বকাপে ২৬ ম্যাচে ১৩টি গোল করেছেন মেসি। যেখানে ২০০৬ জার্মানিতে তার অভিষেক বিশ্বকাপে তিনি তিনটি ম্যাচ খেলে একটি গোল করেছেন। তবে দক্ষিণ আফ্রিকায় ২০১০ বিশ্বকাপে পাঁচ ম্যাচ খেলে একটিও গোল করতে পারেননি। ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপে সাত ম্যাচে করেছিলেন চার গোল। ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপে চার ম্যাচে ১ গোল ও ২০২২ কাতারে সাত ম্যাচে ছয় গোল করেছেন।

কোপা আমেরিকায় মেসির গোল

মেসি ২০০৭ সালে প্রথমবার কোপা আমেরিকায় খেলেন। সেবার ছয় ম্যাচে দুটি গোল করতে পারেন। কিন্তু ২০১১ আসরে চার ম্যাচে কোনো গোল করতে পারেননি। ২০১৫ আসরে ছয় ম্যাচে করেন এক গোল। কোপা আমেরিকার বিশেষ আয়োজন সেন্তেনারিওতে ২০১৬ সালে পাঁচ ম্যাচে সর্বোচ্চ পাঁচটি গোল করেন। এরপর ২০১৯ আসরে ছয় ম্যাচে করেন একটি গোল। আর সবশেষ ২০২১ আসরে সাত ম্যাচে চারটি গোলের দেখা পান।

বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে মেসির গোল

মেসি চারটি বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে অংশগ্রহণ করেন। যেখানে ২০১০-এ চারটি গোল করেন। ২০১৪ বাছাইপর্বে সর্বোচ্চ ১০টি গোল করেন। ২০১৮ ও ২০২২ সালে করেন সমান সাতটি করে গোল।

মেসির হ্যাটট্রিক

জাতীয় দলের হয়ে মেসি আটটি হ্যাটট্রিক করেন। প্রথমবার তিনি ২০১২ সালে প্রীতি ম্যাচে সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করেন। ম্যাচে আর্জেন্টিনা ৩-১ গোলে জেতে। একই বছর চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলের বিপক্ষে ৪-৩ ব্যবধানে জেতা ম্যাচে হ্যাটট্রিক করেন। এরপর গুয়েতেমালা, পানামা, ইকুয়েডর, হাইতি, বলিভিয়া ও এস্তোনিয়ার বিপক্ষে হ্যাটট্রিকের দেখা পান।

মেসির প্রিয় প্রতিপক্ষ

মেসি আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বেশি বলিভিয়ার বিপক্ষে আটটি গোল দিয়েছেন। এরপর ইকুয়েডর ও উরুগুয়ের বিপক্ষে যথাক্রমে ছয়টি করে গোল দিয়েছেন। ব্রাজিল, চিলি, এস্তোনিয়া, প্যারাগুয়ে ও ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে পাঁচটি করে গোল দেন।

আর্জেন্টাইন খেলোয়াড় হিসেবে সবচেয়ে বেশি ট্রফি

২০১৪-১৫ মৌসুমে বার্সেলোনার হয়ে লা লিগা জিতে মেসির ক্যারিয়ার ট্রফির সংখ্যা হয়ে যায় ২৪টি। পরে তিনি জিতেছেন আরও অনেক ট্রফি। তবে ওই ট্রফি জয়ের মধ্য দিয়ে এস্তেবান কাম্বিয়াসোকে ছাড়িয়ে সবচেয়ে বেশি ট্রফি জয়ী আর্জেন্টাইন ফুটবলার হয়ে যান তিনি।

আর্জেন্টিনার সর্বোচ্চ গোলদাতা

২০১৬ সালের শতবর্ষী কোপা আমেরিকার সেমি-ফাইনালে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে ফ্রি-কিকে গোল করে গাব্রিয়েল বাতিস্তুতার ৫৪ গোলের রেকর্ড ছাড়িয়ে যান মেসি, হয়ে যান আর্জেন্টিনার সর্বোচ্চ গোলদাতা।

আর্জেন্টিনার জার্সিতে প্রথম ট্রফি

২০১৪ বিশ্বকাপ ফাইনালে এবং ২০০৭, ২০১৫ ও ২০১৬ সালের কোপা আমেরিকা ফাইনালে হারের পর অবশেষে মেসি আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের হয়ে প্রথম ট্রফির স্বাদ পান ২০২১ সালে। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলকে তাদেরই মাটিতে ১-০ গোলে হারিয়ে কোপা আমেরিকা জয়ের মধ্য দিয়ে ২৮ বছরের শিরোপা খরা কাটায় আর্জেন্টিনা।

স্বপ্নের বিশ্বকাপ ট্রফি

২০২২ কাতার বিশ্বকাপের আগ পর্যন্ত অপ্রাপ্তি তবু ছিলই তার- বিশ্বকাপ জয়। অবশেষে ক্যারিয়ারের গোধূলি বেলায় ধরা দেয় সেই স্বপ্নের ট্রফি। ফ্রান্সকে টাইব্রেকারে হারিয়ে তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ ট্রফির স্বাদ পায় আর্জেন্টিনা, কাটে বিশ্ব মঞ্চে তাদের ৩৬ বছরের শিরোপা খরা।

বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ

কাতার আসরের ফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে মাঠে নেমে বিশ্ব মঞ্চে বেশি ম্যাচ খেলার রেকর্ড গড়েন মেসি। তিনি পেছনে ফেলেন জার্মানির লোথার মাথেউসের ২৫ ম্যাচ খেলার আগের রেকর্ড।
আর্জেন্টিনার বর্ষসেরা ফুটবলার ১৫ বার (২০০৫, ২০০৭, ২০০৮, ২০০৯, ২০১০, ২০১১, ২০১২, ২০১৩, ২০১৫, ২০১৬, ২০১৭, ২০১৯, ২০২০, ২০২১, ২০২২)

বিশ্বকাপে রেকর্ড

একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে পাঁচটি বিশ্বকাপে অ্যাসিস্ট করার কীর্তি মেসির।